জীবনের প্রবাহমানতা
1. ক্রোমোজোম কাকে বলে? কয় প্রকার ও কি কি?
উওর:-
ইউক্যারিওটিক কোষের কোশের নিউক্লিয়াস মধ্যস্থ, নিউক্লিয় জালিকা থেকে উৎপন্ন এবং
নিউক্লিওপ্রোটিন দ্বারা গঠিত, যে দন্ডাকার অংশ
জীবের বংশগত বৈশিষ্ট্য গুলিকে বহন করে, এবং প্রজাতির পরিব্যক্তি, প্রকরন এবং বিবর্তনের মুখ্য ভূমিকা পালন করে, তাকে ক্রোমোজোম বলে।
• ক্রোমোজোমের হল জিনের বাহক।
ক্রোমোজোম দুই প্রকার- i. অটোজোম, ii. সেক্স ক্রোমোজোম।
মানুষের দেহকোশে ২৩
জোড়া বা ৪৬টি ক্রোমোজোম থাকে। তার মধ্যে ২২ জোড়া বা ৪৪টি অটোজম
এবং ১ জোড়া বা ২টি সেক্স ক্রোমোজোম থাকে।
2. জিন কাকে বলে? এর অবস্থান লেখ।
উওর : ডিএনএ (DNA) অনুর প্রতি তিনটি নিউক্লিওটাইড দ্বারা গঠিত যে কার্যগত
একক অ্যামাইনো
অ্যাসিডের সংকেত বহন করে, তাকে জিন বলা হয়।
• জিন প্রধানত ক্রোমোজোমে থাকে। এবং জিন হলো ডিএন-এর বিশেষ
অংশ।
জিনের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লেখ :
Ø • জিন নিউক্লিয় অ্যাসিড দ্বারা গঠিত হয়।
Ø • জিন প্রধানত ক্রোমোজোমে থাকে।
Ø • জিম বংশগত বৈশিষ্ট্যের ধারক এবং বাহক হিসেবে কাজ করে।
3. নিউক্লিক অ্যাসিডের রাসায়নিক উপাদান গুলি সংক্ষেপে আলোচনা
করো। বা, DNA ও RNA কী?
উওর :
ডিঅক্সিরাইবো শর্কর্য দিয়ে গঠিত যে নিউক্লিক অ্যাসিড জীবের সমস্ত রকম জৈবিক কাজ
এবং বংশগত বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করে তাকে ডি.এন.এ বলা হয়।
·
DNA- এর রাসায়নিক
উপাদান সমূহ :
Ø • ডিএন-এর গঠনগত এবং কার্যগত একক এর নাম হলো নিউক্লিওটাইড।
Ø ডিএনএ (DNA) তিনটি অংশ দ্বারা গঠিত-
Ø ১- ডিঅক্সিরাইবোজ শর্করা (5C যুক্ত পেন্টোজ শর্করা)
Ø ২- ফসফরিক অ্যাসিড (H3PO4)
Ø ৩- নাইট্রোজেন বেস বা ক্ষার।
•
নাইট্রোজেন বেস প্রধানত দুই রকমের হয়।
যথা:- ১-
পিউরিন এবং ২- পিরিমিডিন।
• ডি.এন.এ (DNA)- তে অ্যাডেনিন এবং গুয়ানিন নামক দুই ধরনের পিউরিন এবং সাইটোসিন এবং থাইমিন নামক দুই ধরনের পিরিমিডিন নাইট্রোজেন বেস থাকে।
• ডিঅক্সিরাইবোজ শর্করার সঙ্গে যেকোনো এক ধরনের (পিউরিন বা পিরিমিডিন) নাইট্রোজেন
বেস যুক্ত হয়ে নিউক্লিওসাইড গঠন করে।।
• নিউক্লিওসাইড ফসফরিক অ্যাসিডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নিউক্লিওটাইড গঠন করে।
• RNA - (রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড) রাসায়নিক উপাদান সমূহ ।
·
রাইবোনিউক্লিক
অ্যাসিড তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত।
• ১- রাইবোজ শর্করা (5C যুক্ত পেন্টোজ শর্করা )
• ২- ফসফরিক অ্যাসিড (H3PO4 )
• ৩- নাইট্রোজেন বেস বা ক্ষার।
•
RNA
- এর নাইট্রোজেন বেস দু'রকমের।
যথা-
১- পিউরিন ও
২- পিরিমিডিন।
- RNA - তে অ্যাডেনিন ও গুয়ানিন নামক দুই ধরনের পিউরিন এবং সাইটোসিন এবং ইউরাসিল নামক দুই ধরনের পিরিমিডিন নাইট্রোজন বেস থাকে।
· রাইবোজ শর্করা সঙ্গে যেকোনো এক ধরনের (পিউরিন বা পিরিমিডিন) নাইট্রোজেন বেস যুক্ত হয়ে নিউক্লিওসাইড গঠন করে। নিউক্লিওসাইড ফসফরিক অ্যাসিডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নিউক্লিওটাইড গঠন করে।
4. নিউক্লিক অ্যাসিড কত প্রকার? ও কী কী?
উওর :
নিউক্লিক অ্যাসিড দ্বারা দুই প্রকার। যথা: ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড এবং
রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড।
·
1935 খ্রিস্টাব্দে
বিজ্ঞানী ওয়াটসন এবং ক্রিক DNA- অণুর দ্বিতন্ত্রী
নকশা তৈরি করেছিলেন, যা দ্বিতন্ত্রী
কুন্ডলী নামে পরিচিত।
5. ইউক্যারিওটিক ক্রোমোজোমের বহির গঠন বা অঙ্গসংস্থান সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। অথবা, ক্রোমোজোমের গঠন লেখো।
উওর : একটি ইউক্যারিওটিক ক্রোমোজোমের মোট ছয়টি অংশ থাকে। যথা, ক্রোমাটিড, ক্রোমোনিমা, প্রাথমিক খাঁজ, গৌন খাঁজ, স্যাটেলাইট এবং টেলোমিয়ার।
![]() |
ক্রোমোজোমের গঠন |
·
ক্রোমাটিড :
প্রতিটি ক্রোমোজোম লম্বালম্বিভাবে বিভক্ত হওয়ার পর যে দুটি সমান আকৃতির সুতোর মতো
অংশ নিয়ে গঠিত হয়,তাকে ক্রোমাটিড বলা
হয়।
·
ক্রোমোনিমা :
প্রতিটি ক্রোমাটিড যে সূক্ষ্ম তন্ত্র দ্বারা গঠিত হয়, তাদের ক্রোমোনিমা
বলে।
(ইন্টারফেস
দশায় ক্রোমোজোম এর মধ্যে যে সূক্ষ তন্তু থাকে, তাদের ক্রোমানিমটে বলে)
· প্রাথমিক খাঁজ : ক্রোমোজোমের মাঝ বরাবর যে খাঁজ থাকে, তাকে প্রাথমিক খাঁজ বলা হয়। ক্রোমোজোমের প্রাথমিক কাজ অংশে যে ঘন অরঞ্জিত অংশটি থাকে, তাকে সেন্ট্রোমিয়ার বলা হয়।
· গৌণ খাঁজ : ক্রোমোজোমে প্রাথমিক খাঁজ ছাড়াও আরেকটি খাঁজ থাকে,যাকে গৌণ খাঁজ বলা হয়। এটি নিউক্লিওলাসের পুনর্গঠনে সাহায্য করে। একে নিউক্লিয়ার অর্গানাইজার রিজিয়ন বলা হয়।
· স্যাটেলাইট : কোনো কোনো ক্ষেত্রে গৌণ খাঁজের শেষ প্রান্তে যে ছোট অংশটি থাকে, তাকে স্যাটেলাইট বডি বলা হয়। স্যাটেলাইট বডি যুক্ত ক্রোমোজোমকে স্যাট ক্রোমোজোম বলা হয়।
· টেলোমিয়ার : ক্রোমোজোমের দুইদিকের শেষপ্রান্তকে বলা হয় টেলোমিয়ার।
6. কোশ বিভাজন কয় প্রকার এবং কী কী?
উওর : কোষ বিভাজন প্রধানত তিন প্রকার।
যথা:-
১- অ্যামাইটোসিস কোষ বিভাজন,
২- মাইটোসিস কোষ বিভাজন।
৩- মিয়োসিস কোষ বিভাজন।
· অ্যামাইটোসিস কোষ বিভাজনঃ- যে প্রক্রিয়ায় বেম তন্তু গঠন ছাড়াই নিউক্লিয় পর্দার অবলুপ্তি না ঘটে কোষের নিউক্লিয়াস এবং সাইটোপ্লাজম সরাসরিভাবে বিভাজিত হয়ে দুই বা তার অধিক অপত্য কোষ সৃষ্টি হয়, তাকে অ্যামাইটোসিস বা প্রথম কোষ বিভাজন বলা হয়। কিছু নিম্ন শ্রেণীর জীব যেমন- ব্যাকটেরিয়া, ঈস্ট ইত্যাদি কোষে এমাইটোসিস ঘটে।
গুরুত্ব- নিম্নশ্রেণির জীবদের সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটে।
· মাইটোসিস বা সমবিভাজন কোষ বিভাজনঃ- যে প্রক্রিয়ায় দেহ মাতৃকোষের নিউক্লিয়াস এবং সাইটোপ্লাজম বিভাজিত হয়ে সমসংখ্যম ক্রোমোজোম বিশিষ্ঠ সমগুন সম্পন্ন দুটি নতুন অপত্য জীব সৃষ্টি হয়, থাকে মাইটোসিস বলা হয়।
স্থান : উদ্ভিদের বর্ধনশীল অঙ্গে,অর্থাৎ ভাজক কলা এবং প্রাণীদের সমগ্র দেহে ও জ্বণের পরিস্ফুটন এর সময়।
গুরুত্ব:
• সদৃশ বিভাজন: মাইটোসিস পদ্ধতিতে উৎপন্ন নতুন অপত্য নিউক্লিয়াসটি মাতৃ নিউক্লিয়াসের মতো সম আকৃতি ও সমগুন সম্পন্ন।
• জীবের আকার ও আয়তন বৃদ্ধি : মাইটোসিস কোষ বিভাজনের ফলে দেহে নতুন অপত্য কোষ সৃষ্টি হয়। যার ফলে জীব দেহের আকার ও আয়তন বৃদ্ধি পায়।
• ক্ষতস্থান পূরণ : মাইটোসিস কোষ বিভাজনের ফলে কোনো ক্ষতস্থান, নতুন কোষ এর মাধ্যমে পূরণ হয়।
• অযৌন জনন : মাইটোসিস প্রক্রিয়া এর মাধ্যমে নিম্নশ্রেণির এককোশী জীবরা তাদের অযৌন জনন সম্পন্ন করে। এবং এর মাধ্যমে তারা নিজেদের বংশবিস্তার করে।
• নিউক্লিয় - সাইটোপ্লাজমীয় অনুপাত বজায় রাখা: মাইটোসিস কোষ বিভাজন কোষে নিউক্লিয়াস এবং সাইটোপ্লাজম এর আয়তনের অনুপাত বজায় রাখে।
· মিয়োসিস কোষ বিভাজনঃ-
• যে কোষ বিভাজন পদ্ধতিতে একটি জনন মাতৃকোষের নিউক্লিয়াস পরপর বিভাজিত হয়ে, জনন মাতৃকোষের অর্ধেক ক্রোমোজোম বিশিষ্ট চারটি নতুন অপত্য কোষ সৃষ্টি করে,তাকে মিয়োসিস কোষ বিভাজন বলা হয়।
• স্থান : প্রধানত জীবের জনন মাতৃকোষ অর্থাৎ জীবের গ্যামেট গঠনকালে জনন
মাতৃকোষ এ ঘটে। উদ্ভিদ দেহের ডিম্বক, পরাগধানী ও স্পেরোনোজিয়াস।
গুরুত্ব :
• ক্রোমোজোম সংখ্যার হাস:- মিয়ােসিস পদ্ধতিতে উৎপন্ন অপত্য কোশের প্রতিটিতে ক্রোমোজোম সংখ্যা কমে গিয়ে জনন মাতৃকোশের অর্ধেক হয়ে যায়। যা জীবের প্রজাতির ক্রোমোজোম সংখ্যা নির্দিষ্ট বা ধ্রুবক রাখার জন্য আবশ্যিক।
• গ্যামেট উৎপাদন : মিয়ােসিসের কোষ বিভাজনের ফলে জনন মাতৃকোষ থেকে গ্যামেট উৎপাদন হয়। এই প্রক্রিয়াকে গ্যামেটোজেনেসিস বলা হয়।
• নতুন বৈশিষ্ট্যের সঞ্চার: মিয়োসিস কোষ বিভাজনের ফলে প্রজাতির মধ্যে নতুন বৈশিষ্ট্যের সঞ্চার হয়। যা আসলে জীব বৈচিত্রের প্রসার ঘটায় এবং জৈব অভিব্যক্তিতে সাহায্য করে।
• প্রকরণ:- মিয়োসিসের ফলে ক্রসিংওভারের সময় ক্রোমাটিডের অংশের বিনিময়। ঘটায় জিনের সজ্জা-বিন্যাস বা সজ্জা-প্রকরণেও পুনর্বিন্যাস ঘটে, যার জন্য অপত্য জীবের মধ্যে নতুন বৈশিষ্ট্যের সৃষ্টি হয়। এই নতুন বৈশিষ্ট্য সঞ্চারনের ফলে - যে নতুন সৃষ্টি হওয়া জীবের মধ্যে যে অভিন্নতা দেখা যায়, তাকে প্রকরন বলা হয়।
7. কোষ চক্র কাকে বলে? কোশচক্রের বিভিন্ন দশা গুলি সম্পর্কে আলোচনা করো। অথবা, কোষ চক্রের ইন্টারফেজ দশা কী কী ব্রাসায়নিক উপাদান সংশ্লেষিত হয়?
উওর : কোষের বৃদ্ধি ও বিভাজনের বিভিন্ন দশার চক্রাকার আবর্তনকে কোশচক্র বলা হয়।
• কোষ চক্রের বিভিন্ন দশা :- কোষ চক্রের প্রধানত দুটি দশা রয়েছে।
যথা :- ইন্টারফেজ দশা এবং মাইটোটিক ফেজ। ইন্টারফেজ দশা আবার, G1, S & G2 দশায় ও মাইটোটিক ফেজ ক্যারিওকাইনেসিস (প্রফেজ, মেটাফেজ, অ্যানোফেজ এবং টেলোফেজ) ও সাইটোকাইনেসিস দশায় বিভক্ত।
· • নিউক্লিয়াস বিভাজনকে ক্যারিওকাইনেসিস এবং সাইটোপ্লাজম বিভাজনকে সাইটোকাইনেসিস বলা হয়।
· ইন্টারফেজ দশা:-
· G1 বা Gap -1 বা প্রাক সংশ্লেষ দশা :
• এই দশা পূর্ববর্তী কোষ বিভাজনের শেষে ও S উপদশার শেষে ঘটে।
• এই দশায় ডিএনএ, আরএনএ, উৎসেচক, অ্যামাইনো অ্যাসিড, নিউক্লিওটাইড এবং ATP সংশ্লেষ ঘটে।
· · সংশ্লেষ দশা বা S দশা :
• G1 ও G2 উপদশার মধ্যবর্তী সময়ে ঘটে।
• এই দশায় DNA সংশ্লেষ ঘটে।
• এই দশায় হিস্টোন প্রোটিন সংশ্লেষিত হয়। যা DNA- এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে নিউক্লিওজোম গঠন করে।
· · G2 বা GAP -2 বা সংশ্লেষ পরবর্তী দশা :-
• এটি s উপদশা এবং মাইটোটিক দশার মধ্যবর্তী সময়ে ঘটে।
• এই দশায় ক্ষতিগ্রস্ত ডিএনএ অনুর মেরামত হয়, এবং কনডেনসন ঘটে।
• বিভিন্ন প্রকারের আয়নের যেমন মেসেঞ্জার আর.এন.এ.ট্রান্সফর্মার আর.এন.এ, রাইবোজোম আর,এন,এ ইত্যাদি সংশ্লেষ হয় এবং প্রোটিন সংশ্লেষণ ঘটে।
· মাইটোটিক ফেজ-
• ক্যারিওকাইনেসিস : মাতৃকোষের একটি ক্রোমোজোম দুটি সিস্টার ক্রোমাটিড এ বিভক্ত হয়ে, দুই মেরুতে এসে অবস্থান করে। ফলে মাতৃকোষে দুই মেরুতে সমসংখ্যক অপত্য ক্রোমোজোম বিশিষ্ঠ দুটি অপত্য নিউক্লিয়াস গঠিত হয়।
• সাইটোকাইনেসিস : অপত্য নিউক্লিয়াস সৃষ্টি হওয়ার পর কোশের বিষুব তলে কোশপাত (উদ্ভিদ কোশ) বা খাঁজ (প্রাণীকোশ) সৃষ্টির মাধ্যমে মাতৃকোশের সাইটোপ্লাজম বিভক্ত হয়। এবং দুটি অপত্য কোশ সৃষ্টি হয়।